May 19, 2024, 4:04 am

শার্শায় নানা ফলের ভিড়ে জনপ্রিয় মধুমাসের তালের শাঁস

আরিফুজ্জামান আরিফ ।। “ঐ দেখা যায় তাল গাছ।ওই আমাদের গাঁ।ওই খানেতে বাস করে কানা বগীর ছা”। গাঁয়ে এখন বগীর ছানা থাক বা না থাক যশোরের শার্শা উপজেলার প্রতিটি এলাকার তালগাছগুলোতে কিন্তু কচি তালে ভরে গেছে। কিন্তু যে দিনকাল পড়েছে, নিশ্চিন্তে কোনো ফলই খাওয়ার মতো নেই। ফরমালিনের বিষে হয়তো নীল হয়ে আছে প্রিয় ফলটি। তবে এই ফরমালিনের ভিড়ে ব্যতিক্রম তালের শাঁস। এতে যে ফরমালিন মেশানো হয়না,সে তো সবার জানা।

জ্যৈষ্ঠের মধু মাসের হরেক রকম বাহারী সব ফলের পাশাপাশি যশোরের শার্শা উপজেলার ছোট বড় বাজার গুলোতে উঠেছে কচি তাল। তালের নরম অংশটি খুবই সুস্বাদু। গ্রাম্য ভাষায় এটি ‘তালের শাঁস’ নামে বেশি পরিচিত। প্রচণ্ড গরমে তালের এই শাঁসটি শহর ও গ্রামের মানুষের কাছে খুবই জনপ্রিয়।

বর্তমানে শহর থেকে শুরু করে গ্রামের বিভিন্ন অলিগলিতে এই মৌসুমি ফল বিক্রির ধুম পড়েছে। অনেক মৌসুমি ব্যবসায়ীরা তাল গাছ থেকে ঝাঁকা ঝাঁকা অপরিপক্ক তাল গাছ থেকে পেড়ে পাইকারি কিনে সেগুলো কেটে বিভিন্ন দামে বিক্রয় করে। তবে নরম অবস্থায় তাল শাঁসের মূল্য অনেক বেশি।

গরমের মধ্যে তৈলাক্ত খাবারের চেয়ে তালের শাঁস অনেক উপকারি। এর রয়েছে অনেক গুণাগুণ। তাই জৈষ্ঠ্যের এ মধুমাসে বাজারে নানা ফল উঠলেও সারাদেশে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছে তালের শাঁস। গ্রীস্মের এই দিনে শার্শায় তালের শাঁস খুবই জনপ্রিয় একটি খাবার। তাই সবার হাতে পৌঁছে যায় কচি তালের শাঁস। বর্তমানে এর চাহিদা অনেক বেড়েছে। বিক্রেতা শাঁস কেটে শেষ তুলতে পারছে না, ক্রেতারা দাঁড়িয়ে রয়েছে শাঁস নিতে।

জানা যায়, যশোর জেলার শার্শা উপজেলার ধনী ও মধ্যবিত্তদের গাছের তালের শাঁস যাচ্ছে পার্শ্ববর্তী জেলাসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। স্কুল, কলেজের শিক্ষার্থীসহ সকল বয়সী লোকের মাঝে এই তালের শাঁসের কদর দিনদিন বেড়েই চলছে।

উপজেলার প্রায় প্রতিটি গ্রামেই তাল গাছ রয়েছে। তালের শাঁস অতি সুস্বাদু হওয়ায় সকল শ্রেণির মানুষের মাঝে তালের শাঁস একটি জনপ্রিয় ফল। উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজার, বাসস্ট্যান্ড এবং অলিগলিতে তালের শাঁস বিক্রি করে অনেক হতদরিদ্র মানুষ জীবিকানির্বাহ করছেন।

শার্শার বাগআঁচড়া বাজারের বিক্রেতা শেখ সাজ্জাদ আলী জানান, তিনি প্রতিবছরই এ সময়ে তালের শাঁস বিক্রি করে সংসার চালান। গ্রামাঞ্চলে ঘুরে ঘুরে তাল ক্রয় করে এনে শাঁস বিক্রি করেন। বৈশাখ মাস থেকে জৈষ্ঠ্যের শেষ পর্যন্ত চলবে তালের শাঁস বিক্রির কাজ। প্রতিদিন প্রায় ১৫০ থেকে ২০০ শাঁস বিক্রি করা যায়। একটি তাল আকার ভেদে ১০ থেকে ১৫ টাকা দরে বিক্রি করা যায়। এতে তার প্রায় ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা লাভ হয়। তালের শাঁস বিক্রি করে ৪ জনের সংসার ভালোই চলছে বলে জানান তিনি।

উপজেলার গোগা গ্রামের ক্রেতা আঃ হামিদ জানান, তালের শাঁস খুবই সুস্বাদু। তালের শাঁস খেতে ভালোই লাগে। ফলে এর চাহিদা দিনদিন বেড়েই চলছে।

ক্রেতা মামুন আলী বলেন, আমি প্রায়ই বাড়িতে খাওয়ার জন্য জনপ্রিয় এই তালের শাঁস কিনে নিয়ে যাই। এটি নরম ও সুস্বাদু। সব বয়সের মানুষই এটি সহজে খেতে পারে।

তবে কালের বিবর্তনে শার্শা উপজেলার বিভিন্ন এলাকার তাল গাছ দিনদিন হারিয়ে যাচ্ছে। এক সময় মানুষ শখ করে বাড়ির পাশে কিংবা রাস্তার ধারে তালের বীজ রোপণ করতো, কিন্তু এখন আর তা চোখে পড়ে না।

মিষ্টি স্বাদের মোহনীয় গন্ধে ভরা প্রতি ১০০ গ্রাম তালের শাঁসে রয়েছে ৮৭ কিলো ক্যালরি, ৮ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, জলীয় অংশ ৮৭.৬ গ্রাম, আমিষ ৮ গ্রাম, ফ্যাট ১ গ্রাম, কার্বো হাইড্রেট ১০.৯ গ্রাম, খাদ্যআঁশ ১ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ২৭ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ৩০ মিলিগ্রাম, লৌহ ১ মিলিগ্রাম, থায়ামিন .০৪ গ্রাম, রিবোফ্লাভিন ০২ মিলিগ্রাম, নিয়াসিন ৩ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি ৫ মিলিগ্রাম। এসব উপাদান আপনার শরীরকে নানা রোগ থেকে রক্ষা করাসহ রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে।

তাল শাঁসের বিভিন্ন পুষ্টিগুণ রয়েছে। বিশেষ করে গরমের দিনে তালের শাঁসে থাকা জলীয় অংশ পানিশূন্যতা দূর করে। প্রাকৃতিকভাবে দেহকে রাখে ক্লান্তিহীন। তালে থাকা ভিটামিন সি ও বি কমপ্লেক্স আপনার পানিপানের তৃপ্তি বাড়িয়ে দেয়। খাবারে রুচি বাড়িয়ে দিতেও সহায়তা করবে। তালে থাকা ভিটামিন এ দৃষ্টিশক্তিকে উন্নত করে। তালে থাকা এন্টি অক্সিডেন্ট শরীরকে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়।

তাল বমিভাব আর বিস্বাদ দূর করতে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তালে থাকা উপকারী উপাদান ত্বককে ভালো রাখে। কচি তালের শাঁস লিভারের সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে। কচি তালের শাঁস রক্তশূন্যতা দূরীকরণে দারুণ ভূমিকা রাখে। তালের শাঁসে থাকা ক্যালসিয়াম হাঁড় গঠনে দারুণ ভূমিকা রাখে।।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     আরও সংবাদ :